বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই শুরু হচ্ছে তৃণমূলে নির্বাচনী হাওয়া। আগামী ডিসেম্বরে দুই শতাধিক পৌরসভায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলটি। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মতামত নেয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ভোটের মাঠে জোটগতভাবে অংশ নেবে দলটি। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে জোট ও ফ্রন্টের নেতারা।
এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার পর বিএনপির তৃণমূলে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা উপায়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকে কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবেও নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা ত্যাগী, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে সরকার ও নির্বাচন কমিশন নষ্ট করে দিয়েছে। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। আগামী নির্বাচনেও অতীতের মতো কারচুপি হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এমন আশঙ্কার পরও নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন কতটা নিচে নামতে পারে, তা জাতি দেখুক। এর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও একটা চাঙ্গাভাব তৈরি হবে। সাংগঠনিকভাবে দলে গতি আসবে। সবকিছু বিবেচনা করেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সেটা দলীয় না জোটগতভাবে করব, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে আমরা দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছি। দলীয়ভাবে অংশ নিলেও ভোটের মাঠে জোট ও ফ্রন্টের শরিকদের যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা নিয়ে তারা আমাদের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবে বলে আশা করি। সেজন্যই তো জোট ও ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেয় বিএনপি। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নেয় দলটি। ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ভরাডুবি হয়। নির্বাচনের পর থেকে জোট ও ফ্রন্টের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বিএনপি জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার চেয়ে নিজ দলের দিকে বেশি নজর দেয়। সাংগঠনিকভাবে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, এককভাবে নির্বাচনেও অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। দলীয়ভাবে দেয়া হয় প্রার্থী। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ উপনির্বাচনে এককভাবে প্রার্থী দেয়া হয়। সর্বশেষ পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনেও দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। ইতোমধ্যে পাবনা-৪ আসনের দলীয় প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি চারটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়েছে। এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে জোট ও ফ্রন্টের নেতাদের মতামতও নেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, আগামী দিনে পৌরসভা নির্বাচনেও এই ধারা অব্যাহত রাখবে দলটি। দলীয়ভাবে পৌরসভাগুলোয় ধানের শীষের প্রার্থী দেয়া হবে। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে জোট ও ফ্রন্টের নেতাদের ভোটের মাঠে নামানোর চেষ্টা করবেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। অতীতের নির্বাচনগুলোয়ও তাই হয়েছে। বিএনপি এককভাবে প্রার্থী দিলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষে মাঠে নেমেছে জোটের শরিকরা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় হবে না বলে মনে করছে বিএনপি।
জানা গেছে, জোট ও ফ্রন্টের নেতারাও এসব নির্বাচন নিয়ে ততটা আগ্রহী নয়। তাছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে তাদের তেমন যোগ্য প্রার্থীও নেই। তাই জোটের প্রধান শরিক বিএনপি এককভাবে প্রার্থী দিলেও তাতে শরিকদের মৌন সমর্থন থাকবে। এ নিয়ে তারা কোনো বাগড়া দেবে না। তবে কোথাও জোটের শক্তিশালী প্রার্থী নির্বাচন করতে আগ্রহী হলে সেখানে তাকে ছাড় দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই প্রার্থীকে দেয়া হবে ধানের শীষের প্রতীক।
জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ভোটের মাঠে আমরা জোটগতভাবে থাকব। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে মেধা, শ্রম ব্যয় করব। তাকে বিজয়ী করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বরাবরই সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার। শুধু করোনার কারণে আমরা গত দুইটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়েও পরবর্তী সময়ে প্রচারে যাইনি, সরে দাঁড়িয়েছি। পৌরসভা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় অংশগ্রহণ করব। এসব নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয়া হতে পারে। তবে কোথাও কোথাও জোটের শরিকদের শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে সেখানে ছাড় দেয়া হতে পারে। প্রার্থী দলীয়ভাবে দেয়া হলেও ভোটের মাঠে জোটগতভাবে থাকব বলে আশা করি।
ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির : দেশের নির্বাচন উপযোগী দুই শতাধিক পৌরসভায় ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে কমিশন সচিবালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ৬৮ ও ৬৭তম সভার কার্যবিবরণীতে এ নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একদিনে সারা দেশে ভোট হলেও এবার একাধিক দিনে ভোটগ্রহণের চিন্তাভাবনা চলছে। সেক্ষেত্রে জানুয়ারিতেও নির্বাচন গড়াতে পারে। পৌরসভাগুলোর তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সত্ত্বেও পৌরসভা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত রয়েছে কমিশনের। অপরদিকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আগামী মার্চের শেষ বা এপ্রিল থেকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এবারও কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ হতে পারে।
Leave a Reply